ফসলি মাঠে ধান গাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
ফসলি মাঠে ধান গাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
গাজীপুরের শ্রীপুরে ফসলি মাঠে ধান গাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। বিস্তীর্ণ সবুজ ধানখেতে সবুজ ও বেগুনি রঙের ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা শহীদ আবু সাঈদের অবয়ব চিত্র দেখে অনেক পথচারী থমকে যান। শিল্পী মনা কৃষক মো. এনামুল হকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নজর কেটেছে স্থানীয়দের।
উপজেলার টেংরা বাজার পার হলেই বেকাসাহারা গ্রামে মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের দক্ষিণ পাশের খেতে সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ ধানের জমিতে যেন দুই হাত প্রসারিত করে বিভিন্ন দাবি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুকে বুলেট পেতে নেওয়া শহীদ আবু সাঈদের দৃশ্য সবুজ ও বেগুনি ধানের খেতে দেখতে পেয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।
শস্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন মো. এনামুল হক (৪১)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাসাহারা শ্রমের বাসিন্দা। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল একই গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে। এনামুলের বাবা মারা গেছেন। মা জোহরা বেগম (৬৫) ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার।
গত বছর একই জমিতে শস্যচিত্রে ‘জাতীয় পতাকা’ ও এর আগে ২০২২ সালে ‘মা’ শব্দটি ফুটিয়ে তিনি বেশ আলোচনায় আসেন। তার শস্যচিত্র দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন, প্রশংসাও করছেন কেউ কেউ।
শস্যচিত্রের নির্মাতা এনামুল হক জানান, ২০২১ সালে প্রথম তার এক বিঘা জমিতে বেগুনি ধান রোপণ করেন। পরের বছর মাকে ভালোবেসে ব্যতিক্রম কিছু করার পরিকল্পনা করেন। সেই চিন্তা থেকে এক বিঘা জমিতে বাংলায় ‘মা’ শব্দটি শস্যচিত্রে রূপ দেন। তখন তার মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। অনেক দর্শনার্থী সেই শস্যচিত্র দেখে প্রশংসা করেছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে পরের বছর জাতীয় পতাকার শস্যচিত্র তৈরি করেন, আর এবার আকেন শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি।
এনামুল হক জানান, প্রথমে সুতা দিয়ে আবু সাঈদের অববয় তৈরি করেন। এরপর সেই গঠন অনুযায়ী, রোপণ করেন দুই জাতের ধান গাছ। তাঁর সঙ্গে ধান রোপণে সহযোগিতা করেছেন আরও কয়েকজন। শহীদ আবু সাইদের উৎসর্গ স্মরণীয় করতেই তিনি এবার শষ্যচিত্রে তা ফুঁটিয়ে তুলেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়ক থেকে আবু সাঈদের ছবি তুলছিলেন মো. মিজানুর রহমান নামের এক পথচারী। তিনি বলেন, ‘বন্ধুর কাছে খবর পেয়ে শস্যচিত্র দেখতে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই এসেছে। চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন এনামুল হক।’
সন্তানের এমন উদ্যোগের বিষয়ে এনামুল হকের মা জোহরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে শখ করে এগুলো করেছে। মা হিসেবে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে। খারাপ তো কিছু করছে না। মানুষ তার প্রশংসা করে। আমিও তাকে উৎসাহ দিই।’
এ উদ্যোগ সম্পর্কে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘কৃষক এনামুল হকের শষ্যচিত্রের কথা শুনেছি। এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কৃষি শুধু খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম নয়, সৃজনশীলতারও একটি ক্ষেত্র।’