Saturday, March 8, 2025

কেন শেখ হাসিনাকে আর সমর্থন করবে না ভারতীয় মিডিয়া?

আরও পড়ুন

দিল্লির আকাশে তখন ঝলসানো দুপুর, জানালার ওপারে গাঢ় রোদ, কিন্তু ঘরের ভেতর শীতল বাতাস বইছে। সোফার কোণে হেলান দিয়ে বসে আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হাতে ভারতের একটি সংবাদপত্র। বড় করে ছাপানো হেডলাইনটি পড়তে গিয়ে তার চোখে অস্বস্তি ফুটে উঠছে—”বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় বদলের সময় এসেছে হাসিনাকে সমর্থন করা কি ভারতের জন্য ক্ষতিকর?”

শেখ হাসিনা কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়লেন, তার ঠোঁট কামড়ে ধরে আরো মনোযোগ দিয়ে সংবাদটি পড়তে শুরু করলেন। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে তার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেছে। দ্যা প্রিন্ট, হিন্দুস্থান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে—সব জায়গাতেই এখন প্রশ্ন উঠছে হাসিনার সম্পর্কে। একসময় যেসব সংবাদমাধ্যম ছিল তার পক্ষে, তারা এখন প্রশ্ন তুলছে, কেউ সরাসরি বলছে, “বাংলাদেশের জনগণের কাছে হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা নেই,” আর কেউ পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারতকে নতুন কৌশল নিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

এক সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে শেখ হাসিনার প্রতি ছিল গভীর সমর্থন, এমনকি বলা হতো হাসিনাই ভারতের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মিত্র। তবে বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক মহলে হাসিনাকে নিয়ে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে এবং ভারতীয় নীতি এখন বিপদে পড়তে পারে। দ্যা প্রিন্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে ভারত নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে, বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ তীব্র হয়ে উঠছে, এবং ভারতের স্বার্থ এখন হুমকির মুখে।”

ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বিজেপি বাংলাদেশী জনগণকে পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবে চিত্রিত করছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি সতর্কবার্তা উঠে এসেছে, “দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে হারানো ভারতের জন্য কৌশলগত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে।”

আরও পড়ুনঃ  এয়ার টিকিটের দাম অন্যান্য দেশের সমপর্যায়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্র সচিব

বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ক্ষোভ শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, বরং ভারতীয় নীতির বিরুদ্ধেও প্রকাশিত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত বিরোধী মন্তব্যের সুনামি দেখা যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এমনকি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, ভারত তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রকে বাঁচাতে গিয়ে পুরো বাংলাদেশকেই হারাতে বসেছে।

এখন ভারতের কূটনৈতিক মহলে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। এক পক্ষ বলছে, “হাসিনাকে সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত,” অন্য পক্ষ বলছে, “এখনই সরে যাওয়ার সময়।” একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “শেখ হাসিনার ভারত নির্ভরতা এখন তার রাজনৈতিক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সমর্থন তাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না, বরং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ডেকে আনবে।”

আরও পড়ুনঃ  ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি করেছিল শেখ হাসিনা, এখন ফেঁসে যেতে পারেন নিজেই

এখন প্রশ্ন উঠছে, “নরেন্দ্র মোদি সরকার কি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দেবে, নাকি তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নতুন কোন কৌশল গ্রহণ করবে?” ভারতের সামনে দুটি পথ রয়েছে: এক, হাসিনাকে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা, এবং দুই, হাসিনাকে বাঁচাতে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়া—যা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বড় ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।

এই সংকটপূর্ণ সময়ে ভারতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শেখ হাসিনা জানেন, তার কপালের ভাঁজ আরও গভীর হতে চলেছে। প্রশ্ন একটাই—দিল্লি কি সত্যিই তার বিশ্বস্ত হাসিনাকে ছাড়তে চলেছে?

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ