নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় ‘চোর সন্দেহে’ মানসিক প্রতিবন্ধীকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ছবির পাইক গ্রামে ধুমচর ছমিরপাইক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জহির উদ্দিন বেচু (৪০) উপজেলার সুন্দলপুর ইনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লামছি গ্রামের প্রয়াত মো. মোস্তফার ছেলে।
মুঠোফোনে ধারণ করা তিনটি ভিডিও ক্লিপের একটিতে দেখা যায়, ভোর রাতের দিকে কয়েকজন লোক জহির উদ্দিন বেচুকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনকে বেচুর চোখ উপড়ে ফেলার কথা বলতে শোনা যায়। একজন বেচুর সাথে আর কে ছিল তার নাম না বললে তাকে জানে মেরে ফেলার কথা বলতে শোনা যায়।
অন্য একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, সকালে বেচুকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গুরুতর জখম নিয়ে তিনি কাতরাচ্ছেন আর লোকজন তা দেখলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
আরেক ভিডিও ক্লিপে তাকে সড়কে কাতরাতে দেখা যায়।
কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. হাফিজুর রহমান জানান, নিহত জহির উদ্দিন বেচু ২০২০ সাল থেকে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, শুক্রবার ভোররাতের দিকে একদল লোক চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন জহির উদ্দিন বেচুকে আটকের পর পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে বেচুর চোখে, মুখে, হাতে, পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুচিয়ে খুচিয়ে জখম করা হয়। অমানুষিক নির্যাতনের পর একটি গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা তাকে। সকাল ৯টা পর্যন্ত এভাবে গাছের সাথে কাতরাতে থাকেন বেচু। পরে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সকাল ১০টার দিকে মিয়ার হাট বাজারের কাছে তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া জানান, এ ঘটনায় নিহতের মা নাজিয়া খাতুন বাদী হয়ে রাতে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ বলেন, ‘জহির উদ্দিন বেচুর কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। চার সন্তানের জনক বেচু খুঁটিনাটি দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কখনো বড় ধরনের কোনো চুরি করছে বলে কারও জানা নেই।’
এছাড়া ঘটনাস্থলের পাশে বেচুর বোন ও খালার বাড়ি। বেচু প্রায়ই বোনের বাড়িতে যাওয়া-আসা করে বলেও জানান ইউপি সদস্য মো. হানিফ।