বন্যা থেকে রক্ষা পেতে সিলেটের মৌলভীবাজারের আলী নগরে মনু নদীর পাড়ে উঁচু ও শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। ত্রিপুরার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের এই বাঁধ নির্মাণের ফলে আগামী মৌসুমে ত্রিপুরার কৈলাশহর এলাকায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
ত্রিপুরার গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার সীমান্তের বিপরীতে ভারতের অংশেও একটি বাঁধ রয়েছে। তবে কয়েক দশক আগে নির্মিত ওই বাঁধটি বাংলাদেশের নতুন বাঁধের তুলনায় অনেকটাই নিচু। এ অবস্থায় বাংলাদেশ উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ করলে সেখানে বড় আকারের বন্যার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ত্রিপুরার কর্মকর্তারা।
এই ইস্যুতে ত্রিপুরা বিধানসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেসের প্রবীণ বিধায়ক বিরজিৎ সিনহা। পরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ইস্যুটির গুরুত্ব স্বীকার করে বিধানসভাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উত্থাপন করেছে এবং ছবিসহ প্রমাণও পাঠিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই বিষয়টি আবারও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব, কারণ এটি উভয় দেশের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত।’
কৈলাশহরের বিধায়ক সিনহা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের দিকে বাঁধটি অনেক বড় আকারে নির্মাণ করা হচ্ছে, যা আমাদের দিকের অবকাঠামোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের দিকের বাঁধটি ভালো অবস্থায় নেই। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে মৌসুমে কৈলাশহরে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে।’
ত্রিপুরার উনকোটি বিভাগের বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দিলীপ কুমার চাকমা বলেছেন, “মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি স্থায়ী ও উঁচু। সীমান্তের জিরো পয়েন্টের ঠিক পাশেই এটি তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের যে বাঁধটি রয়েছে, সেটি জিরো পয়েন্ট থেকে ৩৫০ গজ দূরে অবস্থিত এবং অনেকটাই নিচু।” তিনি দাবি করেছেন, ভারতের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই বাংলাদেশ সরকার বাঁধটি তৈরি করছে।
একজন বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, বাংলাদেশ এই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ স্বাক্ষরিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, সীমান্তের জিরো পয়েন্টের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো দেশ কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে না।
মনু নদী ত্রিপুরার কৈলাশহরের লাঠিয়াপুরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সীমান্তের বেড়ার কাছাকাছি অবস্থিত।